বাউফলের ১১ জেলে ভারতে আটক, পরিবারের দিন কাটছে না খেয়ে

বাউফলের ১১ জেলে ভারতে আটক, পরিবারের দিন কাটছে না খেয়ে

দেলোয়ার হোসেন, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: আইনী জটিলতার কারনে প্রায় দেড় মাস ধরে ভারতে আটকে থাকা ১১ জেলেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনেরা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ওই জেলেরা ভারতে আটকে থাকায় খেয়ে-না খেয়ে মানবতর জীবন-যাপন করছেন তাঁদের পরিবার।
ভারতে আটকে থাকা জেলেরা হলেন,পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ এর মো. বাবুল ব্যাপারী (৫০), একই ইউনিয়নের চর মিয়াজান গ্রামের মো. জসিম বয়াতী (৪০), মো.আবুল মাতুব্বর (৪৮), মো. সুমন (৩০), মো. সোহরাব মাঝি (৩৭), চর রায় সাহেব গ্রামের মো. সবুজ ব্যাপারী(৪৫), দিয়ারা কচুয়া গ্রামের কামাল সরদার ((৪০), কায়েস হাওলাদার (৩৫), ফিরোজ খলিফা (৪০), ভোলার  লালমোহনের নাজিরপুর গ্রামের মোতাহার(৪০) ও  বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর গ্রামের মো.করিম হোসেন (৩৫)।
 সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট বাবুল ব্যাপারীসহ মোট ১২জন জেলে  নিয়ে  তাঁর (বাবুল ব্যাপারী) এম ভি সামিরা নামে মাছ ধরার  ট্রলারে করে  বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে রওনা হন। ১৭ আগস্ট তাঁরা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে নামেন।  আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে ১৯ আগস্ট  বেলা ১১টার দিকে মাছ ধরার ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১২জনের মধ্যে ১১জন সাগরে ভাসতে ভাসতে ভারত সিমান্তে চলে যায়। জসিম হাওলাদার (২০) নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ জসিম উপজেলার নাজিরপুর- তাঁতেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।
রবিবার তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়,ভারতে আটকে থাকা জেলেরা তাদের স্বজনদেরকে জানান, ট্রলার ডুবে গেলে তাঁরা ১২জন বাঁশ ও প্লাস্টিকের পট ধরে সাগরে ভাসতে থাকেন।  প্রবল ¯্রােতে জসিম হাওলাদার তাঁদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। টানা ১৭ ঘন্টা সাগরে ভাসার পরে ২০ আগস্ট তাঁরা  ভারতের তালপট্টি জঙ্গলে আশ্রয় নেন। ওই জঙ্গলেই তাঁদের রাত কাটে। পরের দিন (২১ আগস্ট) ভারতের চব্বিশ পরগণার জীবনতলা গ্রামের জোনাব মোল্লা নামের এক  ট্রলার মালিক তাদেরকে উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে এক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদেরকে থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে জোনাব মোল্লা তাঁদেরকে তাঁর জিম্মায় নিয়ে যান। এখন তাঁরা সেখানে রয়েছেন।
এদিকে, ভারতে আটকে থাকা গরির জেলে পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অসহায় এসব পরিবার এখন পর্যন্ত সরকারের কোন রকম সহায়তাও পায়নি। ভারতে আটকে থাকা জেলে সোহরাব মাঝির  স্ত্রী মোসা. পারভীন বলেন,‘ দেড় মাস ধরে আমার স্বামী ভারতে বন্দি। কাম-কামাই করার আর কোন লোক নাই আমাগো সংসারে। এহন তিন  পোলা-মাইয়া লইয়া খাইয়া- না খাইয়া আমাগো দিন কাডে।’
আবুল মাতুব্বরের স্ত্রী মোসা. শিল্পী বেগম জানান,‘ স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে  আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই।
এবিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমকে বলেন,‘ ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতে আটকে পড়া জেলেদের ফিরিয়ে আনার জন্য  সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনুরোধ করা হবে।’