বিলুপ্তির পথে রাখাইন মাতৃভাষা সংরক্ষনে নেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বিলুপ্তির পথে রাখাইন মাতৃভাষা সংরক্ষনে নেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

মোঃ হাইরাজ তালতলী প্রতিনিধি: যথাযথ চর্চা, মাতৃভাষায় শিক্ষা সংকট এবং সংরক্ষনের অভাবে সংকটের মুখোমুখি তালতলীর ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা। ক্ষয়িষ্ণু এ জাতিসত্রার নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষা মুখে ব্যবহার করলেও লিখতে বা পড়তে পারছেনা। যথাযথ পৃষ্টপোষকতা না পেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম’র জন্য মাতৃভাষা সংরক্ষন ও প্রচলন নিয়ে শংকিত এ জাতিগোষ্ঠী। ভাগ্য বিতারিত হয়ে ১৭৮২ সালে মায়ানমারের অরাকান প্রদেশ থেকে বরগুনার জনমানবহীন, জংগলাকীর্ন তালতলীতে এসে বসতি স্থাপন করে নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়। পরে বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে বরগুনার তালতলী পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে তোলে বসতি। রাজকীয় জীবন ধারায় অভ্যাস্ত এ জাতিগোষ্ঠী হিংস্র জীবজন্তু পরিপূর্ণ জঙ্গল পরিস্কার করে গড়ে তোলে আবাদি জমি। ধীরে ধীরে এদের পাশেই গড়ে ওঠে বাঙালি বসতি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারায়, ভাষাগত দুরত্বের কারনে দিন দিন পিছিয়ে পড়ে রাষ্ট্র্ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে। হয়ে পড়ে অনাগ্রসর জাতি। ভূমি বিরোধসহ নানা ঝামেলায় জড়িয়ে এ জাতিগোষ্ঠীর অনেকে তালতলীতে প্রায় ৯টি পাড়ার ৬০০টির মত পরিবার বসবাস করে এরা তালতলীর বিভিন্ন ¯থানে তালতলী পাড়া, ছাতন পাড়া, নামিসি পাড়া, আগাঠাকুরপাড়া, গোরাঠাকুরপাড়া, লালুপাড়া,তুলাতলী পাড়া সওদাগর পাড়া ও,কবিরাজ পাড়া, মিয়ানমারের উপভাষা রাখাইন ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত এ জাতিগোষ্ঠীর জন্য শুরু থেকেই মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বিকল্প হিসেবে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ফলে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও তারা নিজেদের ভাষা পড়তে এবং লিখতে পাড়েনা অনেকেই। ক্ষয়িষ্ণু এ সম্প্রদায়ের ১১২ জন বিদ্যালয়গামী শিশু কিশোররা চায় মায়ের ভাষা যেভাবে মুখে বলছে সেটা পড়তে ও লিখতে। ফলে শিশু শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে ভাষাগত চর্চা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের সীমিত পৃস্টপোষকতায় বাড়ির নিচে পাঠশালা খুলে রাখাইন মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করছেন, কারিতাস বাংলাদেশের আইসিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর বই পেয়ে স্বোচ্ছাশ্রমে পাঠদান করাচ্ছেন। তবে এখানে রয়েছে পৃষ্টপোষকোতা অর্থিক নানা সমস্যা। বাড়ির নিচে সীমিত পরিসরে দারিদ্রতায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কষ্টকর উলখ্য করে ছাতন পাড়ার শিক্ষক ক্রাথান বলেন, রাখাইন ভাষা চর্চা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে লিখিত এবং পঠিত কোন ব্যবস্থা ছিলনা। ফলে অনেকেই মুখে বলতে পারলেও লিখতে ও পড়তে পারেনা। এ কারনেই মায়ের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে মায়ানমার থেকে বই সংগ্রহ করে পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এতেও রয়েছে নানামুখী সমস্যা। রাখাইন বর্নমালার পাঠ্য বইয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে রাখাইন শিশুরা যেন নিজের ভাষাকে ধারন ও লালন করতে পারে। রাখাইন অধিকার আন্দোলন কর্মী মংচিন থান বলেন, জাতিগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের অধিকার এখনও সংবিধানিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের ৪৫টি নৃ-জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষনেও রাষ্ট্রের উদ্যোগ ছিলনা। অনেক ভাষার অনেক শব্দ এ কারনে হারিয়ে গেছে। যা কখনো হয়ত উদ্ধার করা যাবেনা। ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়া কোন রাষ্ট্রর জন্য সুখককর বিষয় নয় এটা অনেকটা কষ্টের। তবে দেরীতে হলেও মাত্র ৫টি জনগোষ্ঠীর মাঝে পাঠ্যবই বিতরন করছে সরকার। তবে এখানও উপেক্ষিত রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়। এ বিষয় তালতলী উপজেলার র্নিবাহী অফিসার দিপায়ন দাস শুভ বলেন রাখাইন মাতৃভাষা সংরক্ষনে তারা কখনো আমাদের কাছে আসেনি আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।