বয়ঃসন্ধিকালীন পরিচর্যায় সচেতন হয়ে উঠেছে কিশোরী

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিচর্যায় সচেতন হয়ে উঠেছে কিশোরী

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিচর্যায় কিশোরী বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। এ বিষয় সচেতনতা লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। অনেকেই  মনে করেছে, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসা, পুষ্টি এবং সামাজিক অপরাধ থেকে মুক্তরাখা। ফলে অভিভাবক তাদের সন্তানের প্রতি বিশেষ ভাবে যতœবান হচ্ছেন। পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সরেজমিন ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নওমালা ইউনিয়নের একটি গ্রামে মোট জনসংখ্যা হচ্ছে দেড় হাজার। ৯-১৫ বছর বয়সী কিশোরী হচ্ছে আড়াই শত। ওই গ্রামের বেশি ভাগ কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালীন পরিচর্যা কার্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত হতে সক্ষম হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত এমনকি পরিবার পর্যায়ে বয়ঃসন্ধিকালীন করনীয় বিষয় ধারনা প্রদানের ফলে তারা আজ সচেতন।
উপজেলায় খোজ নিয়ে জানাগেছে, বাউফল মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আয়োজনে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষককে জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উপজেলার ৪৬ টি বিদ্যালয়ে কিশোরী কর্নার রয়েছে। বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন গালর্স সেমিনারী সহকারি শিক্ষক গাইড টিচার মনিরুজ্জামান মঞ্জু বলেন, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সহযোগিতায় কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট বাস্তবায়নে অত্র সেমিনারে কিশোর কিশোরী কর্নার রয়েছে।সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন তৈরি উপকরন দিয়ে কর্নারটি সাজানো দেখা গেছে। ভিতরে কম্পিউটার, বই, রেজিস্টার এবং ফ্লিপ চার্টসহ অভিযোগ বক্স রয়েছে। ঘন্টাব্যাপী কিশোরী ও গাইড টিচার সাথে আলাপচারিতায় জানাগেছে, বিদ্যালয় ৫ টি ক্লাশ ছাত্র-ছাত্রী মধ্যে ১০ টি দল রয়েছে। প্রতিটি দলে ১ জন দলনেতা। রয়েছে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা। জেন্ডার, নিজেকে চেনা, বয়ঃসন্ধি, প্রজনন স্বাস্থ্য, এবং পরিস্কার পরিছন্নতা, আবেগ,সহিংসতা,জেন্ডার,বাল্যবিবাহ বিষয়ভিত্তিক মডিউল। যে বিষয়গুলো নিয়ে কিশোর কিশোরী সরাসরি আলোচনা করতে সংকোচবোধ করেন ওই বিষয় নিয়ে অভিযোগ বক্স খোলা হয়েছে। কিশোরী তাদের সমস্যা লিখে অভিযোগ বক্সে রাখবেন। অত্র কিশোরী কর্নার নিয়োজিত টেকনিক্যাল অভিযোগ বক্স খুলে তাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে থাকেন।
গাইড টিচার মনজু আরো জানান, বিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পের আওতায় কিশোর কিশোরী কর্নার মাধ্যমে সচেতন হয়ে উঠেছে। কামরুজ্জামান জানান, মহিলা বিষয়ক দপ্তরে আয়োজনে কিশোর কিশোরী ১৮ টি ক্লাব রয়েছে। প্রতি ক্লাবে সদস্য ১৫ জন কিশোরী ১০ জন কিশোর মোট ২৫ জন। উক্ত ক্লাবে আওতাধীন ৪৫০ জন কিশোরী সদস্য রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত ইপিআই টিকা স্থান,স্যাটেলাইট ক্লিনিকসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে আগত কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, টিকা এবং কিশোরী বয়সে নানা অপরাধ থেকে দুরে থাকা প্রভৃতি বিষয় ধারনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলার বিশেষ কওে  স্লোব বাংলাদেশ, স্পিড ট্রাস্ট,ব্র্যাক স্বাস্থ্য  সচেতনতামূলক কাজ করছে। নওমালা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোসা: আবিদা সুলতানা জানান, সাড়ে তিন বছর দায়িত্বপালন কালে দেখা গেছে, ক্রমান্নয়ে কিশোরী রোগী সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বয়ঃসন্ধিকাল মাসিক ¯্রাব নিয়ে সমস্যা মুখোমুখি হয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধান ঔষুধ সেবনের পাশপাশি পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।  
দেখা  গেছে, উপজেলার ঔষুধ দোকানগুলোর পাশাপাশি প্রায় মুদি ও কসমেটিক্স দোকানে স্যানিটারী ন্যাপকিন বিক্রি হচ্ছে। প্রা য় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে স্যানিটারী ন্যাপকিন  রাখা হয়েছে। বর্তমান এগুলো ব্যবহার করতে সংকোচ বোধ করছে না। তবে প্রতিটি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিশোরীদেও জন্য কর্নার রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেছে অনেকেই।

বাউফল ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্র এফ ডাব্লিউ বি সালমা বেগম জানান, বয়ঃসন্ধিকাল বয়সের কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ সময়টাতেই বৃদ্ধির চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে। বাস্তবতা সর্ম্পকে অভিজ্ঞতা কম থাকায় অন্যের প্ররোচনায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়া পড়া। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। চিন্তা ও কর্মে দুঃসাহসিক কিছু করার প্রবনতা সৃষ্টি হয়। অধিক লজ্জার কারনে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। তিনি আরো বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য,সংক্রামক রোগ ও অন্যান্য রোগ সর্ম্পকে ধারনা কম থাকে। যৌন আচরনের ফলাফল সর্ম্পকে ধারনা কম থাকে। এ বিষয় মায়ের পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকারদেও নজর দেওয়া উচিৎ। জাতিসংঘের চুক্তি অনুসারে সাসটেইনেভেল ডেভেলপমেন্ট গোল ৩ নম্বর যে অর্জন কথা বলা হয়েছে,স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা। সরকারি বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের সকল স্তরের লোকজনকে টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।