হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও শীতের রসের পিঠা

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও শীতের রসের পিঠা

দেলোয়ার হোসেন, বাউফল ঃ ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরের এক এক সময়ে প্রতিটি ঋতুতে ভিন্ন এক রুপ ধারন করে এদেশ। কালের পরিক্রমায় প্রতি বছর হাজির হয় শীত কাল। সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রকৃতিক উপাদান নিয়ে হাজির হয় এই ঋতু। কিন্ত আজ হারাতে বসেছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা অনেক রুপ।তার মধ্যে অন্যতম খেজুর গাছের রস এবং শীতের রসের পিঠা। নিকট অতীতেও শীতের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের একশ্রেনীর মানুষ ব্যস্থ থাকতো ‘গাছ ছিলানো’ নিয়ে। খেজুর গাছ কাটার কাজে নিয়োজিতদের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘গাছি’। কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে প্রকৃতির সেরা উপহার খেজুরের রস সংগ্রহ করতে পারে সেটা নিয়ে ছিল এক আনন্দময় প্রতিযোগিতা।
খেজুরের রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস গ্রাম বাংলার মানুষের নবান্নের সেরা উপহার। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হতো পাটালীগুঁড়, মিঠাই সহ নানা রকমের মজার মজার খাবার। সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও শিতের রসের পিঠা। খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ার কারনে খেজুরের রস বিক্রেতা ও গাছি সহ আরো যারা এ ধরনের মৌসুমী পেশা বেছে নিচ্ছে। গ্রাম বাংলার মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কোথাও কোথাও দু’একটি খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসাবে। কয়েক বছর আগেও দেখা যেত গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাছে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছিরা দিনের শুরু থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধারাল দা, মুগির প্রভৃতি একটি লম্বা ঝুড়িতে করে বেধে নিয়ে যেত খেজুর গাছ কাটার জন্য। ঘুরে বেড়াতো এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি। খুব ভোরে রস সংগ্রহ করে খেজুরের গুঁড় তৈরীর জন্য একত্রিত করত। সকাল থেকে দিনের অর্ধবেলা পর্যন্ত মা-বোনেরা সেই রস থেকে গুঁড় তৈরি করতো। আবার অনেক গাছি কুয়াশার ভেতরেই গ্রামীন পথ ধরে কাধে রসের ভার বহন করে হেঁটে চলত রস বিক্রির আশায় ।
দিনের বেলায় পাখিরা রসের চুঙ্গিতে বসে মনের সুকে রস খেয়ে উড়ে যেত। মৌমাছিও রসের আশায় ভোঁ-ভোঁ করে উড়ে বেড়াত। কোন কোন সময়ে দুস্ট ছেলে-মেয়েরা চিকন পাইপ বা পাটকাটি দিয়ে অথবা গাছে অন্য উপায়ে হাড়ির রস  খেয়ে পানি ভর্তি করে রেখে দিত। প্রতি বাড়িতে সকাল বেলা খেজুরের রসের পায়েস তৈরি হতো। এখন অন্য অঞ্চল  থেকে খেজুরের রস বিক্রি করতে আসলেও চাহিদা বেশী থকায় দামও বেশী । ছোট একটি রসের হাড়ির দাম ২০০ টাকা  থেকে ৩০০ টাকা।
উপজেলার কালাইয়া ইউপির বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ জ্বালানি হিসাবে বা ঘরের খুঁটি হিসাবে ব্যবহারের কারনে প্রায় খেজুরের গাছ কেঁটে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও খেজুর গাছ ইট ভাটায় বিক্রি করা হয়।  কেননা খেজুরের গাছে পোড়ানো ইটের রং গাঢ় হয়। যার কারনে দিন দিন খেজুরের গাছ হ্রাস পাচ্ছে।