হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আামি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে, বাবুই হাসিয়া কহে-সন্দেহ কি তাই, কষ্ট পাই তবু থাকি নিজেরই বাসায়, পাকা হোক তবু ভাই পরের বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা”- কবি রজনীকান্ত সেনের কবিতাটি এখনো মানুষের মনে পড়ে। একসময় যে পাখিকে নিয়ে লিখেছে কবিতা অথচ সেই বাবুই পাখির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভরশীল হতে উৎসাহ যোগাত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। তালগাছ মানেই ছিল বাবুই পাখির বাসা। আগে কোন তালগাছ ছিল না যাতে পাখির বাসা ছিল না। অথচ সেই তালগাছই এখন বিপন্ন প্রায়। 
গ্রামবাংলার অতি পরিচিত বাবুই পাখি তার নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করতো নিজ বাসা। সেই বাসা দেখতে যেমন ছিল সুন্দর তেমনি পাখির বসবাসের জন্য ছিল মজবুত। সেই নিপুণ শৈল্পিকতা কবি সাহিত্যিকরা তাদের কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কালের আবর্তে এই বাবুই পাখির বাসা আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না বাবুই পাখির বাসা। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তর ঘুরেও সেই বাবুই পাখির বাসার দেখা মিলে নাই। দুই একটি গাছে বাসা থাকলে তাতে পাখি এখন থাকে না। যে কারণে আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প নৈপুন্য। 
প্রবীনদের মুখে শোনা গেল- নারিকেল, তাল, খেজুর, কাশ ও আখ সহ প্রভৃতি গাছের পাতা এবং লম্বা শক্ত ঘাস মুখে করে এনে একটি গাছে তিন প্রকারের বাসা নির্মাণ করতো বাবুই পাখি। এর মধ্যে একটি বসবাসের জন্য, একটি ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবং একটি খাবার সংগ্রহ করে রাখার জন্য। বাসা নির্মাণের জন্য তারা সাধারণত তালগাছকে বেছে নিতো। কারণ অন্যান্য গাছের ডালপালা ঝড়ে ভাঙার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু তালগাছের ডালপালা না থাকায় ভাঙার সম্ভাবনা কম, এক্ষেত্রেও বাবুই পাখির চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। তালগাছ দীর্ঘমেয়াদী গাছ। তাই বাণিজ্যিকভাবে তালগাছের আবাদ হয় না। গ্রামগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তালগাছ। এর সাথে সাথে বাবুই এখন বাসা বাঁধারও জায়গা পায় না। তারপর মানুষ বনবাদাড় পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তুলছে সুরম্য অট্টালিকা। 
প্রকৃতি থেকে তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারনে পাখি বাসা তৈরি করতে পারছে না পাখিরা। যে কারণে বাবুই পাখি প্রজনন করতে না পারায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রকৃতির এই নিপুণ শিল্পীকে বিলুপ্তে হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।