জীববিজ্ঞান--২য় পত্র

জীববিজ্ঞান--২য় পত্র

শিখা ব্যানার্জী

প্রভাষক,প্রাণিবিজ্ঞান

বাউফল সরকারি কলেজ

শ্রেনি---REPTILIA

স্থলজ জীবনে সফলভাবে অভিযোজিত প্রথম প্রাণিগোষ্ঠী হিসেবে সরীসৃপদের উল্লেখ করা হয়।কারন এই প্রাণিগোষ্ঠীর প্রজনন ,ডিম পাড়া বা ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের জন্য জলাশয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে প্যালিওজোয়িক মহাযুগের শেষভাগে উভচর প্রাণী থেকে সরীসৃপ প্রাণীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।মেরুদন্ডী দলের বিভিন্ন প্রকার দেহ গঠনধারী প্রাণীই হল সরীসৃপ।মেসোজোয়িক মহাযুগে এরা পানি,বায়ু স্থল সর্বত্র দখল করে দোর্দন্ড প্রতাপে বিরাজ করেছিল,এজন্য মেসোজোয়িক মহাযুগকে সরীসৃপদের রাজত্বকাল বলা হয়।

উভচর থেকে তুলনামুলক উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেয়া হল:--

() এদের ফুসফুসীয় শ্বসন পূর্ণ বিকশিত হওয়ায় উভচরদের ন্যায় আর্দ্র ত্বকের গুরুত্ব কমে যায়।

() সরীসৃপে বিষগ্রন্থি সৃষ্টি আত্মরক্ষামুলক ব্যবস্থা।

() খোলকাবৃত ডিম ভিতরে আমনিয়ন পর্দা থাকায় এরা স্থলে ডিম পাড়তে পারে এবং সে ডিম ভ্রুণ শুষ্ক পরিবেশে ধ্বংস হয়না।

মেসোজোয়িক মহাযুগের শেষে ক্রিটেসিয়াস যুগে সংঘটিত ব্যাপক ভূমিকম্পে ডাইনোসর (বিরাটাকায় সরীসৃপ)সহ অসংখ্য সরীসৃপ ধ্বংষ হয়ে যায়। তারপরেও যেসব সরীসৃপ টিকে আছে তাদের ৪টি দলে ভাগ করা যায়। যেমন:--

()কচ্ছপের দল ()টিকটিকি সাপের দল ()টুয়াটারা টিকটিকি ()কুমিরের দল ।এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির হল কচ্ছপ,তারপর কুমির।টুয়াটার টিকটিকি জীবিত জীবাশ্ম,এগুলো শুধু নিউজিল্যান্ডে পাওয়া যায়। টিকিটিকির মধ্যে গোসাপ সবচেয়ে বড়।

অধিকাংশ সাপ নির্বিষ,যেমন-অজগর,বিষধর সাপের মধ্যে একচক্র দ্বিচক্র গোখরা বা জাতিসাপ,রাজগোখরা,শংখিনী,চন্দ্রবোড়া এবং সামুদ্রিক সাপ। এদের মধ্যে গোখরা বেশি দংশন করে।

বর্তমানে জীবিত সরীসৃপ প্রজাতি--১০,৪৫০টি।

সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য:-

() এদের ত্বক গ্রন্থিবিহীন,তাই শুষ্ক,সাপে আঁইশ,কুমিরে প্লেট এবং কচ্ছপে ত্বক ক্যারাপেস দ্বারা আবৃত।

() এরা বুকে ভর দিয়ে চলে। দুই জোড়া পদের প্রতিটিতে ৫টি নখরযুক্ত আংগুল আছে।সাপের পা নেই।

() হৃৎপিন্ড অসম্পূর্নভাবে চার প্রকোষ্ঠ-বিশিষ্ট(দুটি অলিন্দ এবং দুটি নিলয়)তবে কুমিরের হৃৎপিন্ড সম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।

() এদের শ্বসন অঙ্গ ফুসফুস।

() এরা ওভিপেরাস,অর্থাৎ ডিম পাড়ে,ডিম চামড়ার মত অথবা চুনময় খোলকে আবৃত

() এরা এক্টোথার্মিক,অর্থাৎ শীতল-রক্ত বিশিষ্ট,এদের মধ্যে শীতনিদ্রা দেখা যায়।

()এদের মধ্যে অপত্য লালন দেখা যায়না,ব্যতিক্রম-কুমির।

কয়েকটি অতি পরিচিত সরীসৃপদের বৈজ্ঞানিক নাম:--

 

 

  1. Hemidactylus brooki(টিকটিকি)
  2. Calotes versicolor(রক্তচোষা)
  3. Chameleon vulgaris(বর্ন চোরা টিকটিকি)
  4. Draco maculatus(উড়ন্ত টিকটিকি)
  5. Trionyx gangeticus(কচ্ছপ)
  6. Gavialis gangeticus(কুমির)
  7. Naja naja(গোখরা সাপ)
  8. Varanus bengalensis(গুই সাপ)

সরীসৃপদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:--

সারা বিশ্বে সরীসৃপদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

যেমন:-

() সাপের মাংস চীন,জাপান ,কোরিয়া আফ্রিকান লোকদের প্রিয় খাদ্য এগুলো বাজারে বিক্রি হয়।এরা কুমিরের মাংসও খায়।কচ্ছপ গোসাপের মাংসও এদের প্রিয় খাদ্য।

() সরীসৃপের চামড়া ,ডিম ,মাংস,বিষ ইত্যাদির বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা চলে।

()পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এজন্য কুমির ,সাপ,কচ্ছপ ইত্যাদির চাষ হয় এবং জাতীয় আয়ের অংশ হয়ে যায়।

() আবার অন্যদিকে সরীসৃপরা অধিকাংশই মাছ খায়,ফলে মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এরা ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

শুধু তাই নয়,এরা নিজেরা যেমন অন্য জীব ভক্ষণ করে ট্রফিকস্তর সৃষ্টি করে,তেমনি আবার নিজেরা মানুষ বা অন্য জীব কর্তৃক ভক্ষিত হয়ে বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহে ভূমিকা রাখে।

প্রশ্নমালা:--

() কোনটি সরীসৃপের যুগ নামে পরিচিত?

() এদের মধ্যে উভচর থেকে উন্নত কিকি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়?

() ডাইনোসর কারা?

() সরীসৃপদের কয় ভাগে ভাগ করা যায়?কি কি?

() টুয়াটার টিকটিকি কি?

()২টি সরীসৃপের বৈজ্ঞানিক নাম লিখ।