মন্ত্রিসভায় নবীনের জয়গান

মন্ত্রিসভায় নবীনের জয়গান

বরিশাল লাইভ অনলাইন ডেক্স:

নতুন মন্ত্রিসভায় চমক দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের দুই মেয়াদের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের প্রায় সবাই বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগের জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের দুই মন্ত্রীও তার পদ ধরে রাখতে পারেননি।

গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের পর গত বৃহস্পতিবার সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মন্ত্রিসভায় চমক থাকছে।

শপথের আগের দিন গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের তালিকা। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হচ্ছেন ২৪, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন আর উপমন্ত্রী ১৯ জন।

নতুন মন্ত্রী কারা হচ্ছেন এর চেয়ে যারা বাদ পড়েছেন, সেটাই আলোচনার কেন্দ্রে। বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোহাম্মদ নাসিম, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুজিবুল হকের মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা।

ইতিহাসের প্রথমবারের মত কিশোরগঞ্জের কেউ স্থান পাননি মন্ত্রিসভায়। আর যারা শপথ দিতে যাচ্ছেন তাদের ২৫ জনই নতুন মুখ।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় থাকা আবদুর রাজ্জাক, দীপু মনি ও হাছান মাহমুদ ফিরে পেয়েছেন মন্ত্রিত্ব। ওই সরকারের প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানও ফিরছেন মন্ত্রীসভায়।

প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হয়েছেন এ কে আবদুল মোমেন, শ ম রেজাউল করিম। প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী জাহিদ ফারুক শামীম, উপমন্ত্রী হয়েছেন এ কে এম এনামুল হক শামীম।

টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন মোস্তাফা জাব্বার ও ইয়াফেস ওসমান। প্রথমবারের মতো টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ।

শপথের আগের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে নামগুলো প্রচার হয়ে যাওয়ার পর পর বিভিন্ন জেলায় আনন্দ উল্লাস করেন ডাক পাওয়া নেতাদের ভক্ত অনুরাগীরা। অন্যদিকে যেসব জেলা মন্ত্রিত্ব পায়নি, সেগুলোতে ছড়িয়েছে হতাশা।

পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী যারা

এবার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ও আলোচনার বিষয় ছিল অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা নিয়ে। জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত পাঁচ বছর পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আ হ ম মুস্তফা কামালই পেয়েছেন এই পদ। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা এম এ মান্নানের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

নিজ মন্ত্রণালয় ধরে রাখতে পেরেছেন কেবল ছয় জন। এরা হলেন ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল (স্বরাষ্ট্র), আনিসুল হক-(আইন, বিচার ও সংসদ) এবং আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক), ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) এবং মোস্তাফা জব্বার (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি)।

কৃষিমন্ত্রী হয়ে মন্ত্রিসভায় ফিরছেন টাঙ্গাইল-১ আসনের আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হয়ে ফিরছেন চট্টগ্রাম-৭ আসনের হাছান মাহমুদ এবং চাঁদপুর-৩ আসনের দীপু মনি।

প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন সিলেট-১ আসনের এ কে আবদুল মোমেন (পররাষ্ট্র) এবং পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিম (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত)।

কুমিল্লা-৯ আসনের তাজুল ইসলাম প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েই পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়ে নরসিংদী-৪ আসনের নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের গোলাম দস্তগীর গাজী পেয়েছেন বস্ত্র ও পাট, নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদার পেয়েছেন খাদ্য, টিপু মুনসি পেয়েছেন বাণিজ্য, পঞ্চগড়-২ আসনের নুরল ইসলাম সুজন পেয়েছেন রেল, মৌলভীবাজার-১ আসনের শাবাহউদ্দিন পেয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

পদোন্নতি হয়েছে তিন জনের। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মানিকগঞ্জ-৩ আসনের জাহিদ মালেক স্বপন এবার হচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। লালমনিরহাট-২ আসনের নুরুজ্জামান আহমেদ তার আগের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েই থাকছেন, তবে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ভূমিপ্রতিমন্ত্রী থেকে হচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হচ্ছেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদূর উশৈসিং।

প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন

পুরনো মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদেই থাকছেন ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ। রাজশাহী-৬ আসনের শাহরিয়ার আলম আগেরবারের মতোই পররাষ্ট্রে আর নাটোর-৩ আসনের জুনাইদ আহমেদ পলক থাকছেন আইসিটিতে।

১৯ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ১৫ জনই প্রথমবাররে মতো ঢুকেছেন মন্ত্রিসভায়। এরা হলেন ঢাকা-১৫ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), ঢাকা-১৯ আসনের এনামুর রহমান (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ), সিলেট-৪ আসনের ইমরান আহমেদ (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেল (যুব ও ক্রীড়া), আশরাফ আলী খান খসরু (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌপরিবহন), কুড়িগ্রাম-৪ আসনের জাকির হোসেন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), মেহেরপুর-২ আসনের ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন), যশোর-৪ আসনের স্বপন ভট্টাচার্য (এলজিআরডি), বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক শামীম, জামালপুর-৪ আসনের মুরাদ হাসান (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ), ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদ (সমাজকল্যাণ), ময়মনসিংহ-৫ আসনের কে এম খালিদ বাবু (সংস্কৃতি বিষয়ক), হবিগঞ্জ-৪ আসনের মাহবুব আলী (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন) এবং শেখ মো. আবদুল্লহ (ধর্ম)

২০০৯ সালের পর পাঁচ বছর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মুন্নুজান সুফিয়ানও ফিরেছেন।

তিন উপমন্ত্রী

তিন জনই প্রথমবারের মতো ঢুকেছেন মন্ত্রিসভায়। এরা হলেন বাগেরহাট-৪ আসনের হাবুবিবন নাহার (পরিবেশ বন ও জলবায়ু পবির্তন বিষয়ক), শরীয়তপুর-২ আসনের এ কে এম এনামুল হক শামীম- (পানিসম্পদ) এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনের মহিবুল হাসান চৌধুরী (শিক্ষা)

সূত্রঃ ঢাকা টাইমস24