গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক

গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক
গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক
গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক

সাইফুল ইসলাম,বাউফল (পটুয়াখালী) : গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার স্থায়ী কেন্দ্র হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। জনগনের দোরগোড়ায় সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌছানো। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে এ কার্যক্রম। কমিউনিটি ক্লিনিকের অত্যাবশ্যকীয় প্যাকেজে রয়েছে, প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, নিরাপদ মাতৃত্ব, প্রসূতি পরিচর্যা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, আরটিআই/এসটিডি/এইআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। মায়েদের পুষ্টি, বিপজ্জনক গর্ভপাত প্রতিরোধ, বয়:সন্ধিকালীন সেবা, বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত চিকিৎসা নবাজাতকের সেবা প্রদান করা। ৬ হাজার লোকের জন্য নিয়োজিত স্বাস্থ্য সহকারী ১ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী ১ জন এবং একটি স্থানীয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে।  
বাউফল উপজেলা সদর থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত নওমালা ইউনিয়নের অর্ন্তগত বাবুরহাট কমিউনিটি ক্লিনিক। দক্ষিন ভিটে ২ কক্ষ বিশিষ্ট ছোট একটি বিল্ডিং। বিল্ডিং অনেক দিনের পুরাতন হলে গ্রামাঞ্চলের নারীর প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। কমিউনিটি তৃণমূল পর্যায়ে লক্ষনীয় বিষয় নিয়ে সরেজমিন গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পুরাতন বিল্ডিং। মধ্যে ভাঙ্গাচুরা। ক্লিনিকটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো গোছানোর নিয়ম থাকলেও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং কক্ষের সে রকম নেই। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উদ্দেশ্য গঠিত যেন সেবার ঘাটতি নেই। সকাল সাড়ে ১০ ঘটিকায় ওই ক্লিনিকে উপস্থিত হলে ভিতরে রয়েছে মহিলা রোগীদের ভীর। কমিউনিটি সার্ভিস কেয়ার প্রোভাইডর আকলিমা এবং স্বাস্থ্য সহকারি (ইপিআই) লাভনী উপস্থিত। কমিউনিটি ক্লিনিক আধা কি: দূর থেকে আসা  ৪০ বয়সী দুজন মহিলা রোগী। জানালেন তাদের সমস্যা কথা। রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে সে দিকে প্রশ্ন না করে একটু দূরে সরিয়ে দেখা যায় নানা চিত্র। হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মোসাঃ আকলিমা বেগম  সকাল ৯:২৫মিনিটের সময় কিøনিকে উপস্থিত হয়ে ছিলেণ। তিনি রোগিদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন। রোগীদের রোগ নির্নয় করে ঔষুধ প্রদান করেন। ঔষধ দিতে অপরাগ হলে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।  রোগ জটিল হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রেরন করে থাকেন। রোগীদের সাথে কথা বলার এক ফাকে নজর কাড়ে দেয়ালে টানানো ক্লিনিকে সিটিজেন চার্টার প্রতি।
সিটিজেন চার্টার অনুসারে কমিউনিটি ক্লিনিক বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে অ্যামোক্সিসিলিন ড্রাই সিরাপ, প্যারাসিটামল, ক্যাপসুল অ্যামোক্সিলিন, ট্যাবলেট সালবিউটামল, ট্যাবলেট হাইসেসিন, ট্যাবলেট মিথাইল অগ্রোমেট্রিন, ফেরাসসল্ট,আয়রন,মেট্রানিডাজল, প্যারাসিটামল,কেট্রোইমক্সাজল, এলবেনডাজাল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,এন্টাসিড, অয়েন্টমেন্ট, ন্ওিমাইসিন আই/ইয়ার অয়েন্টমেন্ট, বেনজাইল বেনজোয়েট এবং সাপোেেনটড দ্রবণ। রোগীদের মৌখিক সাক্ষাৎকার নিয়ে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি রেজিস্ট্রি খাতা তথ্য নিয়ে ওষুধ বিতরন করেন। সাধারন রোগীর রেজিষ্টার ব্যবহার নিয়মাবলী রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হতে দৈনন্দিন স্বাস্থ্য সেবাদান শুরু করার পূর্বে। উল্লেখিত রেজিষ্টারে ১-১৩ কলাম রয়েছে। ১৩ নং কলামে সেবাগ্রহীতাকে প্রদত্ত সেবার নাম,ঔষুধের নাম পরামর্শ ইত্যাদি লিতে হবে। ১১ নং কলামে সেবাগ্রহীতার সম্ভাব্য রোগের নাম এবং রোগের গোত্রীর নাম লিখার জন্য ব্যবহার করতে হবে। ১০ নং কলামে সেবাগ্রহীতার মূল সমস্যা এবং রোগের প্রধান লক্ষন উপসর্গ লিখতে হবে। ৪-৯ রোগীর বয়স ও লিঙ্গ বিভাজন করতে হবে। রোগীর পরিচিতি প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
জৌতা কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রধান করেন তার মধ্যে ইনজেকশন ৪ জন, খাবার বড়ি ৫ জন মহিলা রোগীকে সেবা প্রদান করেন। মোট সাধারন রোগী ২০ জনকে সেবা প্রদান করেন। এর মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা ১৮ জন এবং শিশু রোগীর সংখ্যা ২ জন। দুপুর ২:৩৫ মিনিটের সময় ক্লিনিক বন্ধ করেন। বাউফল উপজেলা তথ্যাসূত্রে প্রাপ্ত হচ্ছে, ১৫ টি ইউনিয়নে মোট ৪৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিক। কমিউনিটি ক্লিনিক মাধ্যমে গত ১ বছরে সেবা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিক ৪ জন কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে সিএইচসিপি ১ জন, স্বাস্থ্য সহকারি (ইপিআই) জন, এফ ডাব্ল্উি এ ১ জন।
 গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক দৃষ্টান্তর সেবা দিতে দেখা গেছে কালাইয়া ইউনিয়নের কর্পূরকাঠী কমিউনিটি ক্লিনিক। কালাইয়া বন্দর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় আড়াই কি: মি: দূরত্ব। দু রুম বিশিষ্ট দালানে। ভিতরে দুই বেড, ষ্টোর রুম, রোগী দেখার কক্ষসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে। উপজেলা ১৫ টি ইউনিয়নের ৪৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিক মধ্যে আলাদা। ক্লিনিক সিএইচসিপি সালমা বেগম প্যারা মেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করে এবং ডেলিভারীসহ স্বাস্থ্যবিষয় একাধিক প্রশিক্ষন নিয়েছে। রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত ডাক্তার সাথে নেটওয়ার্ক। ওই এলাকায় রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে নিজেষ¦ কৌশল। ক্লিনিক বরাদ্ধ ঔষুধ পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আউডডোর রোগী সিরিয়াল নিয়ে কিছু উন্নত মানের ঔষুধ সংগহ করে কমিউনিটি ক্লিনিক মাধ্যমেএলাকায় বিতরন করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক ফান্ড তৈরি করার জন প্রতিজন রোগী থেকে ৫ টাকা ফি নিয়ে থাকে। এ টাকা দিয়ে ক্লিনিক ১ জন সাপোর্ট স্টাফ সম্মানী দিয়ে থাকে। ক্লিনিক চত্বর বাউন্ডারী এবং একটি রাস্তা করেছেন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় সালমা বেগম মধ্যে একজন স্বাস্থ্য কর্মী অনেক গুনাবলী দেখা গেছে।
অনুসন্ধান করে জানাগেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক মেট্রোপলিটন ও পৌরসভা এলাকার বাইরে র্নিমান করা হয়। জেলা ও উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত যথাক্রমে মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হতে আধা ঘন্টা হাটা পথের বাইরে বসবাসরত জনগনের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সুষ্ঠু পরিচালনা ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কমিউনিটি গ্রুপ কমিউনিটি ক্লিনিকের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষনাবেক্ষন এবং তদারকী নিশ্চিত করবে। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় নিয়োজিত একটি ক্লিনিক কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে কোন কোন উপজেলায় বিশেষ কারনে ৮থেকে ২.৩০ মি: পর্যন্ত খোলা থাকবে।
কমিউনিটি ক্লিনিক সরবরাহকৃত ঔষুধ সর্ম্পকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ষ্টোর ইনচার্জ মো: রিয়াজ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ঔষুধ সরবরাহ করা হয়। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ পাঠানো হয়ে থাকে। দুই মাস অন্তর অন্তর দুই কীট ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতিটি কীট ২৬ টি আইটেম ঔষুধ থাকে। এ কীট সিভিল সার্জন অফিস থেকে আলাদা প্যাকেজে পাঠানো হয়। বর্তমানে বাউফল স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ষ্টোরে ওষুধ রয়েছে। ষ্টোর অফিসার  বাউফল উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা: সায়েম বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক। বিশেষ করে নারী শিশু ও কিশোরী সময়মতো ঔষুধ নিতে পারে।
কমিউনিটি ক্লিনিক এর কর্মরত সিএইচসিপি দায়িত্ব হচ্ছে হচ্ছে, তৃনমূল পর্যায়ে মা, শিশু ও পুরুষদের স্বাস্থ্য বিষয় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ পাশাপাশি জরুরী অবস্থায় ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া জ্বর, পানিতে ডোবা, সর্প দংশন কুকুরে কামড়ানো বিপদ সংকেতযুক্ত অন্ত:সত্তা এবং পুষ্টিহীনতা শিশু চিহ্নিত করা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহনকারীদের মধ্যে জটিল রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা পূর্বক দ্রুত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে/ উপজেলা স্¦াস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্সে প্রেরন করা। শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রন, সাধারন রোগসমূহের সীমিত নিরাময়মূলক সেবা প্রদান এবং যোগাযোগের মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গি আচরন বা অভ্যাসের পরিবর্তন করা।সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। মাসিক সভায় পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
 খোজ নিয়ে আরো জানাগেছে, সকল নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় যে গ্যাপ পূরনের লক্ষ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প গ্রহন করে ছিল সরকার। প্রথম দফায় ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রকল্প গ্রহনের মধ্যে দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে এসে এই প্রকল্প পূনরায় চালু করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল হলেও এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি মাসে গ্রামীণ জনপদের ৮০ লক্ষাধিক মানুষ এই ক্লিনিকের থেকে স্বাস্থ্যসেবায় পাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবী করেছে।