গ্রামাঞ্চলে প্রজননতন্ত্র সংক্রমনের হার বাড়ছে: জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকীস্বরুপ

গ্রামাঞ্চলে প্রজননতন্ত্র সংক্রমনের হার বাড়ছে: জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকীস্বরুপ

মুহা: সাইফুল ইসলাম: প্রজননকালীন বয়সে (১৫-৪৯ বছর) গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা প্রজননতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ আক্রান্ত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অধিকাংশ রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়। অথচ অজ্ঞতা ও গোপনীয়তায় হচ্ছে অন্যতম কারন। ফলে গ্রামাঞ্চলে দিনে দিনে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকীস্বরুপ। প্রজননতন্ত্রের সংক্রামন থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং আক্রান্ত হলে দ্রæত চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পরিবার পরিকল্পনা মিডিয়া ফেলোশিপ-২০২০আওতায়  গ্রামাঞ্চলে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার প্রতিবেদনের তথ্যসংগ্রহ করতে গিয়ে এ চিত্র পাওয়া যায়।

প্রজননতনেত্রর সংক্রমণ বলতে প্রজননতন্ত্রের যে কোনো অংশের সংক্রমণকে বোঝানো হয়ে থাকে। চরাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের প্রজননতন্ত্রের সংক্রামনের হার বেশি। কারন মেয়েরা এ রোগ সর্ম্পকে বলতে লজ্জা পায় এবং চিকিৎসকেরদের কাছে আসে না। বেসরকারি তথ্যসূত্রে জানাগেছে, প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের শতকরা ১৫-২০জন প্রজননতন্ত্রের সংক্রমনে ভুগছেন। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমনের কারন মাসিকের সময় অপরিস্কার কাপড় ব্যবহার করা। প্রসব এবং আইইউডি পরানো স্বাস্থ্য সম্মতভাবে এবং জীবাণুমুক্ত উপায়ে না হলে সংক্রমণ ঘটতে পারে মাসিকের নিয়মিতকরন প্রক্রিয়া জীবাণুমুক্ত না হলে। যোনিপথে কোনো প্রকার আঘাত লাগলে বা যোনিপথে অস্ত্রোপচার এবং জীবানুমক্তি না হলে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে যৌনমিলন না করলে। প্রজনননতন্ত্রে যেসব রোগের সংক্রমণ ঘটে তার মধ্যে সিফিলিস, গনোরিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস এবং  এইডস উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি জন্মই হোক নিরাপদ। প্রতিটি  মানুষের বেড়ে ওঠা  হোক সুস্থ সুন্দর এবং স্বাভাবিক।
পরিবার পরিকল্পনা মিডিয়া ফেলোশিপ-২০২০ আওতায় গ্রামাঞ্চলে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার প্রতিবেদনের সংগ্রহকৃত তথ্য।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী রুজিনা বেগম বলেন, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষন ও উপসর্গগুলো: অতিরিক্ত ¯্রাব হয় তবে রং ও ধরন বিভিন্ন হতে পারে। স্ত্রী বা পুরুষের যৌনাঙ্গের বাইরে বা ভেতরে চুলকানি বা ঘা দেখা দিতে পারে। জরায়ু এবং ডিম্ববাহী নালীতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তলপেট ব্যথা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলার সংক্রমনের ফলে গর্ভপাত হতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর ওজন ঠিকমতো বৃদ্ধি না হতে পারে। সংক্রমনের ফলে পরবর্তীকালে ক্ষেত্র বিশেষ জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ডিম্ববাহী নালি বন্ধ হয়ে অনেক মহিলার বন্ধা হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে। প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে, মাসিকের সময় পরিস্কার কাপড় ব্যবহার করা। পরিস্কার পরিচ্ছনতাœ থাকা। পরিস্কার পানিতে গোসল করা, সহবাস ও মল ত্যাগের পর পরিস্কার পানি ব্যবহার করা। জীবাণুমুক্ত উপায়ে মহিলাদের আইইউডি পরানো। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রসবের ব্যবস্থা করা। প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিরাপদ যৌন সর্ম্পক। জীবাণুমুক্ত উপায়ে মাসিক নিয়মিতকরণ।

স্বাস্থ্যকর্মী আরো বলেন, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমনের মধ্যে রয়েছে যৌনরোগ ও প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ। যৌন মিলনের মাধ্যমে যে সব সংক্রমণ বা রোগ হয় তাকে যৌন রোগ বলে। লক্ষণ মহিলাদের ক্ষেত্রে : যোনিপথে র্দুগন্ধযুক্ত ¯্রাব, যৌনঙ্গে ক্ষত বা ঘা যোনিপথে চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া তলপেটে দুই দিকে ব্যথা কুচকি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা ইত্যাদি। যে ভাবে ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলনের মাধ্যমে, জীবানুমুক্ত বা সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহন করা আক্রান্ত মা থেকে সন্তানের মাঝে। মাসিকের সময় পরিস্কার কাপড় ব্যবহার না করলে। প্রসব বা গর্ভপাতের সময় নিরাপদ নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এই সংক্রান্ত ছড়ায়। সংক্রমনের সম্ভাব্য জটিলতা হচ্ছে, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের সন্তান জম্মদানের ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। সন্তান নষ্ট হবার ঝুঁকি বেড়ে যায় মৃত সন্তান জন্ম দেবার সম্ভাবনা থাকে। জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হতে পারে। পুরুষের মুত্রনালীতে সরু হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে করনীয় হচ্ছে, যৌন রোগ সন্দেহ হলে দ্রæত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে। অবশ্যই নিজের যৌনসঙ্গীর (যদি থাকে) একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ ক্ষেত্রে হবে। অন্যান্য বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা উচিত।
উপজেলার উপসহকারী কমিউনিটি ডা:আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রতিনিধিকে বলেন, প্রসবের সময় যদি প্রসবের রাস্তা ছিড়ে গিয়ে কোন ক্ষত হয়ে থাকে তা দেখা এবং শুকিয়েছে কি না তা দেখা। সে ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়েটিক দিতে হবে। প্রসবোত্তর সময়ের বিপজ্জনক চিহ্নিতসমূহ। জর ১০০.৪০ ফারেনহাইট অতিরিক্ত রক্ত¯্রাব পেটে ব্যাথা দুর্গান্ধযুক্ত ¯্রাব। প্রসূতি মাকে হাসপাতাল বা চিকিৎসক কাছে দ্রæত নিতে হবে। পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রসব পরবর্তী প্রজননতন্ত্রের সংক্রমন হচ্ছে মূত্রনালীর সংক্রমন স্তনের জটিলতাসমূহ ছিড়ে যাওয়া। অধিকাংশসময়ে অপারেশন ক্ষতের সংক্রামন হয়। বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩ জন মহিলা গর্ভ ও প্রসবজনিত জটিলতায় মারা যায়। মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারন সমূহ রক্ত¯্রাব গর্ভপাত সেপসিস বাধাগ্রস্থ প্রসব একলাম্পশিয়া অন্যান্য প্রসূতি কারন নিরাপদ মাতৃ¦ নিশ্চিত করা গেলে মাতৃমৃত্যু  হ্রাস পেতে বাধা। আর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা যাবে সকলেরর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।