নিরাপদ প্রসবের প্রস্তুতি পরিবারের সদস্যদের

নিরাপদ প্রসবের প্রস্তুতি পরিবারের সদস্যদের


মুহা: সাইফুল ইসলাম: প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। যে কোন সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই নিরাপদ প্রসবের জন্য প্রথম থেকেই পরিবারের সকল সদস্যদের প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। কোথায় প্রসব করাবে, কাকে দিয়ে প্রসব করাবে তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা। প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত দাই স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স বা ডাক্তার ডেকে বাড়িতে প্রসব করানো যেতে পারে। তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে প্রসব করানো ভালো। ফলে যে কোন জটিল অবস্থার তৎক্ষনাত চিকিৎসার সুবিধা থাকে। বাড়িতে প্রসব করানো সময় যদি জটিলতা মোকাবেলা করে দ্রæত চিকিসা সেবা দেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কেননা, গর্ভকালীন জটিলতা বিপজ্জনক ও জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ন। বাড়িতে প্রসব প্রস্তুতি জটিলতা অবস্থা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি বাড়িতে প্রসবের জন্য কিছু প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। অবশ্যই প্রশিক্ষন প্রাপ্ত দাই বা চিকিৎসকের মাধ্যমে বাড়িতে প্রসব করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। প্রসবের ঘর হতে হবে আলো বাতাশযুক্ত। প্রসবের ঘর যেন ঠান্ডা এবং স্যাত স্যাতে না হয়। ঘরের মেঝে ভালো ভাবে ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যে স্থানে  প্রসব করানো হবে সেখানে প্লাস্টিক সীট মাদুর সাবান গরম পানি এবং স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে মুছে জীবানুমুক্ত করতে হবে। যাতে মা ও শিশুর কোন সংক্রম না হয়।
 গ্রামাঞ্চলে পরিবর্তন আসছে। গর্ভবতী মাসহ পরিবার সবাই তথ্য জানে। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট কেন্দ্র, ইপিআই টিকাকেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য   ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ প্রসবের প্রস্তুতি জন্য বিভিন্ন ভাবে সচেতন করে আসছে। ফলে মা সম্ভাব্য প্রসব আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরেজমিন নওমালা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথ্য সংগ্রহ জন্য যাওয়া হয়। নিরাপদ ডেলিবারী  জন্য অডিকক্ষ রয়েছে। উপস্থিত আছেন দুজন সহকরীমেডিকেল অফিসার ডা: মো সিরাজুল ইসলাম ও আবিদা সুলতান এবং এফ ডাবিø বি ছফুরা খাতুন। পাশে বাড়ীর  সরদার বাড়ি রিপন সরদার স্ত্রী নুপুর  নিরাপদ প্রসবওে জন্য প্রস্তুত। এফ ডাবিøএ  মনিরা খানম ওই বাড়িতে উপস্থিত।  মেবাইল ফোনে মনিরা জানান  ছেলে সন্তান হয়েছে। মা ও শিশু সন্তান সুস্থ আছেন। পরিবাওে সবাই এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র সবাই খুশি। কারন দীর্ঘদিন যযাকৎ  নুপুর ওই স্বাস্থ্যকন্দ্র  স্বাস্থ্যকমীূ পরামর্শ  চলছিল। টিকাসহ হাসপাতাল উপস্থিত হয়েছিলণ। মনিার খানম জানান, তার চাকরী জীবনে আড়াই শত মায়র প্রসব কালীন সহযোগিতা করতে সক্ষম হয়েছে। প্রত্যেকে তার পরামর্শে চলছিল। গর্ভবতীকালীন সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা  স্বাস্থ্য  কমপ্লেক্স কিংবা  বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রেফার করেন।
প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সর্ম্পকে তথ্য দিয়ে বলেণ, বর্তমানে তার অধীনে গর্ভবতী মা রয়েছে ১৩ জন। পুরাতন ৭ জন নতুন ৬ জন। এর মধ্যে ১ জন বাড়িতেডেলিভারী হয়েছে। ৬ মাসের ৩ জন ৯ মাসের ৬ ৯ জন এবং জুলাই মাসে ৭ জনের বাড়িতে দিয়ে সরাসরি পর্যবেক্ষন করে পরামর্শ  দিয়েছে। এবং  ৭জনকে প্রসবোত্তর সেবা  দিয়েছেন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মার্চ মাসের তথ্য হচ্ছে, জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্র/ প্রসূতি বিভাগ ঃ বাউফল আগত রোগীর হচ্ছে ১১ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার ১ জন। প্রসবকৃতরোগী  স্বাভাবিক ৭ জন। জীবিত জম্ম ৭ জন ছেলে ৪ জনমেয়ে ৩ জন। ৩ জনরোগী এ্যাব্রাসন সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে।
বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরডিয়ারা জরিপ করে জানাগেছে, এক সময় ওই এলাকায় ধাত্রী হাতে ডেলিভারি করাতেন। এ সময় অনেক শিশু মারা যেতেন। এমনকি মায়ের অকাল মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনা একাধিক রয়েছে। প্রশিক্ষপ্রাপ্ত ধাত্রী মনোয়ারা বেগম প্রতিনিধিকে জানান, সেই দিন পাল্টে গেছে। গ্রামাঞ্চলের সবাই সচেতন হচ্ছে। রাস্তাঘাট উন্নয়ন হচ্ছে। দ্রæত যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রত্যেক গ্রামে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ধাত্রী রয়েছে। তবুও প্রসবকালীন সময় ঝুকিপূর্ণ সময়। সবাইকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
বিলবিলাস গ্রামে কাকলি বেগম। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের এক মাসের মধ্যে গর্ভে সন্তান আসছে। স্বামীর পরিবারের প্রত্যাশা ছিল একটি সন্তান। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে আবার সন্তান। এটা কাকলি জন্য কতটুকু বিপজ্জনক এটাই সবাই কম বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কাকলি পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের সবাই প্রস্তুত ছিল। নিয়মিত চেক আপ করানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং নার্স, গাড়ীর মোবাইল নম্বর সংরক্ষন করা হয়েছে। হাতের কাছে টাকা সঞ্চয় করে রাখা হয়েছে। ১০ মাস আগেই প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নার্স বাড়িতে আনা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা করার পর ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার ৮ ঘন্টার  মধ্যে নরমাল একটি কন্যা সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছে।
এফডাবিøউএ নাফিসা কাওসার জানান, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চাকরী নেয়ার পর বিভিন্ন প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। নরমাল ডেলিভারী কাজে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। গত ৭ বছরে প্রায় সাড়ে ৭শ ডেলিবারী কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ নরমাল হয়েছে। ৭ ভাগ সিজার করতে পাঠানো হয়েছে। ৩ ভাগ জটিল সমস্যা দেখা দেওয়া বিভাগী বরিশাল মেডিকেল কলেজ পাঠানো হয়েছে। বিলবিলাস গ্রামে নিপা শীল। বিয়ের দেড় বছর মধ্যে গর্ভধারন করছে। গর্ভধারন ৯ মাসের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথম উপজেলা বাউফল হাসপাতাল পরবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার পরামর্শে পটুয়াখালী জেলা হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। সিজার দুটি জমজ সন্তান হয়েছে পায়েল ও পবেল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুষ্টি পায় নি। ওই পরিবারের আর্থিক খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার বেশি। সমস্যা ছিল গর্ভে সন্তান আসার পর পরিবারের ভ’মিকা কম ছিল। নিয়মিত খাবার খায়নি। যেহেতু গর্ভে ২ টি সন্তান খাবার পরিমান বেশি  খাওয়া প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্যবার্তা অনুসারে নিয়মিত ক্লিনিক পরীক্ষা করানো। তবে ইতিবাচক হচ্ছে  ৯ মাস আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা করানো ফলে ২ টি যমজ সন্তান এবং মা আজ সুস্থ আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা তথ্যসূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ইওসি রোগীর সেবার পরিসংখ্যান হচ্ছে (০-৫ বছরের রোগী) হচ্ছে ২০১০থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এএনসি ৯৭০০, ভর্তি ১২৯৮, জটিল রোগী ৩৯৯ নরমাল ডেলিভারী ৭৪৯, ফরসেফ ৫, সিজার ১৪৯, মোট জীবিত শিশু ৮৭১, মৃত্যু শিশু ৩২  পিএনসি ৩৬৯০।
 স্বাস্থ্য কর্মী আকলিমা বেগম জানান, জীবানুযুক্ত বেøড সুতা নাভি কাটার জন্য জীবানুমুক্ত বেøড বা নাড়ি বাধার জন্য সুতা ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে জীবানুমুক্ত করতে হবে। দাই প্রসব সহকারীর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা। দাই বা যিনি প্রসব করবেন তিনি নখ কেটে হাত ভালো করে গরম পানি সাবান দিয়ে ধুবেন। তার পরিধেয় বস্ত্র অবশ্যই সাবান দিয়ে ধোয়া হতে হবে। হাত ধোয়ার পর কাপড়ে হাত না মুছে হাত ঝেড়ে শুকিয়ে নিতে হবে। পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা রাখতে হবে। গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। পরিস্কার কাপড় থাকতে হবে। ভ’মিষ্ট হবার পর শিশুকে পাতলা ধোয়া পরিস্কার কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে জড়াতে হবে।
কালাইয়া  ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র  নাসরিন খানম বলেণ, সবাইকে প্রসব প্রস্তুতি এ তথ্য জানতে হবে এবং জানাতে হবে। প্রথম গর্ভধারনের গর্ভবতীর বয়স ২০ বছরের কম এবং ৩৫ বছরের বেশি হলে। গর্ভবতী উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির (১৪৫ সেন্টিমিটারের) কম হলে। গর্ভের বাচ্চার অস্বাভাবিক অবস্থান হলে (বাচ্চা গর্ভে আড়াইআড়ি ভাবে)। অবস্থান এবং বাচ্চার পাছা নিচের দিকে অবস্থান করলে। গর্ভকালনি সময়ে রক্তখরন হলে। প্রি একরাম্পাইসিয়া এবং একলাম্পসিয়া। রক্তস্বল্পতা হিমোগøবিন ৫০% এর নীচে হলে। জমজ বাচ্চা হলে। গর্ভের পানির পরিমান বেশি হলে। পূর্বে মৃত বাচ্চা প্রসবের ইতিহাস গর্ভে বাচ্চা মাকে থাকা এবং ফুল স্বাভাবিক ভাবে বের না হলে। হাত দিয়ে বের করার ইতিহাস থাকলে। অধিক সন্তান জম্ম দেয়া বয়স্ক মা। বিলম্বিত গর্ভে সম্ভাব্য প্রসব তারিখের ১৪ দিন পরে বাচ্চা না হওয়া। গর্ভের সাথে অন্যান্য অসুখ যেমন হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ ডায়াবেটিস যক্ষèা লিভারের অসুখ থাকলে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রসব কালীন সময় পরিবােেরর সবাই প্রস্তুত থাকলে বিপদ অনেকটা কম হয় এবং দ্রæত সমস্যা সমাধান করা যায়।
কর্পুরকাঠী কমিউনিটি ক্লিনিক সিএইচসিপি সালমা বেগম বলেণ, প্রসূতির  মায়ের সাথে নবজাতক শিশুর সম্পৃক্ত। নবজাতক ০-২৮ দিন। শিশুর জম্মের সাথে সাথে ১ ঘন্টার  মধ্যে তাকে মায়ের স্তন চুষতে দিতে হবে। মায়ের দুধ ছাড়া শিশুকে মধু চিনির পানি পানি তেল বা  অন্য কিছুই দেয়া যাবে না। মা ও শিশুর অবস্থান (পজিশিন) নিয়ে বসতে হবে মা পিঠ হেলান দিয়ে বসেছে। শিশুর পিঠ ও পাছা ভালভাবে ধরতে হবে। শিশুর শরীর ও মুখ মায়ের দিকে ফেরানো আছে কিনা। মায়ের বুকে ভাল ভাবে লেগেছে। শিশুর নিচের ঠোট উঠানো এবং সে বড় করেছে। স্তনের কালো অংশের বেশির ভাগ শিশুর মুখের ভেতর আছে এবং দুধ গেলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এবং মায়ের হাত ঈ এর মত করে ধরতে হবে। প্রসবের সময় যদি প্রসবের রাস্তা ছিড়ে গিয়ে কোন ক্ষত হয়ে থাকে তা দেখা এবং শুকিয়েছে কি না তা দেখা। সে ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়েটিক দিতে হবে। প্রসবোত্তর সময়ের বিপজ্জনক চিহ্ন সমূহ। জর ১০০.৪০ ফারেনহাইট অতিরিক্ত রক্ত¯্রাব পেটে ব্যাথা দুর্গান্ধযুক্ত ¯্রাব। প্রসূতি মাকে হাসপাতাল বা চিকিৎসক কাছে দ্রæত নিতে হবে। পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।