বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি বিএনপি জোট, এই মহাবিপর্যয় তারই ফল---আনন্দবাজার

বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি বিএনপি জোট, এই মহাবিপর্যয় তারই ফল---আনন্দবাজার

অঞ্জন রায়:

বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ভোটবিপ্লবের কথা বলেছিল। আহ্বান জানিয়েছিল, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। ভোটও দিয়েছেন। আর তার ফল, ভোটের প্লাবনে ভেসেছে নৌকা।

কিছু দিন আগে আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,“আমরাই আসছি”। বাংলাদেশের একাদশ সংসদের নির্বাচনের পর সেটাই সত্যি হয়েছে। শেখ হাসিনাই ফের ক্ষমতায় এলেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ যে এতটা উঁচুতে সেটি বোধহয় ধারণাও করতে পারেনি কয়েকদফায় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি। পারেনি বলেই তারা উৎসাহ দিয়েছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে।

বাংলাদেশের এই ভোট-প্লাবনে এবার আর কোনও রাজনৈতিক দল দাড়াতেই পারেনি আওয়ামি লিগের নেতৃত্বের মহাজোটের সামনে। ভোটকেন্দ্রে ঘটে গেছে নীরব বিপ্লব। বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আনন্দবাজারকে বলেছেন,“এটা ভোট সুনামি।এমন ভোটের জোয়ার কল্পনাতীত।তবে এটিই স্বাভাবিক ছিল।” রেজার মতে, আওয়ামি লিগ কথা দিয়ে কথা রেখেছে। এই ভোট সুনামি তারই ফলাফল। রেজা মনে করেন, জনগণের সামনে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট বিভ্রান্তি ছাড়া তেমন কিছু দিতে না পারার ফলাফলেই এই ভোট সুনামি হয়েছে।

ভোটের দিন সকালেও বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট নেতারা ভোটের বিষয়ে কিছু আপত্তির কথা মুখে বললেও তাঁদের মনে অনেক আশাছিল।কিন্তু সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেন বাংলাদেশের ভোটাররা। উঠল ভোটের জোয়ার। সেই জোয়ার পরিণত হল সুনামিতে।ফলে আওয়ামি লিগ জোটের পক্ষে বাংলাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের ২৮৮টি আসন। অন্যদিকে, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট মিলে আসনের সংখ্যা ৭ও নির্দলেরা পেলেন ৪টি আসন। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে নির্বাচন বাকি। 

এগারোতম নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই ভোটারদের কাছে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের আহ্বান ছিল—ভোটকেন্দ্রে যাবেন,ভোট দেবেন। প্রয়োজনে কেন্দ্র পাহাড়া দেবেন। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, ভোটও দিয়েছেন।ভোটের ফলাফল এক সংখ্যা বনাম তিন সংখ্যা। কেন এমন হল? প্রশ্নটা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনউপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকির কাছে।তিনি বলেন, “বিএনপি-কে যাঁরা ভোট দেন, তাঁরা আসলে সম্পূর্ণ দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। বিএনপি-র নেতৃত্বে জামাতে-সহ যে কুড়ি দলীয় জোট কামালদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। কিন্তু, নির্বাচনের দু’দিন আগে কামাল জানান, জামাতে থাকবে জানলে তিনি জোট করতেন না।

অধ্যাপক সিদ্দিকি আরও বলেন, “এমন বক্তব্যে সমর্থকেরাও বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। যার ফলাফল দেখা গিয়েছে ভোটে।নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জোটটির পক্ষ থেকে কে প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় প্রধান হবেন, তা নিয়েও দেখা দেয় অস্পষ্টতা।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের আলাদা ইশতেহার ঘোষণা ও ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে জোটটির নেতা এবং বিএনপি নেতাদের সামঞ্জস্যহীন কথাও বিভ্রান্ত করেছে জনগণকে। প্রচারাভিযানের সময়েও সরব ছিলেন না জোটের অনেকে নেতারা। যার প্রভাবে কর্মীদের সাথে দূরত্বতৈরী হয় তাঁদের। যে কারণে এই জোটের সমর্থকদের অনেকেই ভোট দিতে যাননি আর অল্প সংখ্যক সমর্থক ভোটকেন্দ্রে গেলেও সেটা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।”