রাক্ষুসী তেতুলিয়া নদীর ভাংগন

রাক্ষুসী তেতুলিয়া নদীর  ভাংগন

রেজাউল ইসলাম  ও  সাইফুল  ইসলাম, পটুয়াখালী  থেকে : রাক্ষুসী তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদি ইউনিয়নের ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন সংযোগ’ সড়কের  ভাঙন অব্যাহত। তেঁতুলিয়া নদীর আগ্রাসী হামলায়  ইতিমধ্যে ইউনিয়নের বুড়িকান্দা  এলাকার  বেড়িবাঁধ অনেকাংশ বিলনী হয়েছে।  এতে  বিলীন হচ্ছে  বাঁধের উপর নির্মাণ করা ইউনিয়নের বিটুমিন কাপেটিংএর পাকা সংযোগ সড়কটি। এখন বাঁধের  ভেঙ্গে যাওয়া অংশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে  বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে  ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম। উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের সাথে সরাসরি সড়ক  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। উপজেলা দশমিনা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হবে। ফলে চরম ভোগান্তিকে পরবে হবে রনগোপলদি ইউনিয়নবাসিদের।  
পানিউন্নয় বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, রনগোপালদি ও আলীপুরা ইউনিয়নের  তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পাড়ের কৃষকের ফসল রক্ষাসহ দুর্যোগ ও প্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষায় নব্বই দশকে পাউবো এই এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এর পর বাঁধটি রক্ষাবেক্ষন করছে এলজিইডি শাখা।
এলজিইডি, দশমিনা উপজেলা কার্যালয় জানায়, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে এলজিইডি ‘দক্ষিন-পশ্চিম প্রকল্প’ এর আওতায়  দশমিনা উপজেলা সদর থেকে আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে রনগোপালদি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পর্যন্তু ৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার বাঁধের উপর বিটুমিন কাপের্টি ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন’ সংযোগ সড়ক  নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। বর্তমানে বুড়িকান্দা এলাকায় নদী ভাঙনে  বাঁধের ৬৫ মিটার ধসে গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পানির চাপে উপজেলার বুড়িকান্দা এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে  বাঁধের উপর পাকা সড়কটি নদীতে ভেসে গিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।  এই ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের উত্তর দিকে ইউনিয়নের  রনগোপালদি, উত্তর রনগোপালদি, খলিশাখালী, গোলবুনিয়া, গুলি ও যৌতা গ্রাম এই ছয়টি গ্রাম এবং দক্ষিনদিকে রয়েছে রনগোপালদি, রনগোপালদি বাজার, আউলিয়াপুর, পাতারচর ও চর ঘূর্ণি এই পাঁচটি গ্রাম। এছাড়াও দক্ষিনদিকে রয়েছে ইউপি কার্যালয়।   বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে  ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে। এই অবস্থায় এলাকার লোকজন খুব সাবধনতার সঙ্গে বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করছেন। ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বুড়িকান্দা এলাকার বাসিন্দা রেজাউল খলিফা জানায়, গত বছর নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে জোয়ারে সময় তার প্রবল বেগে বাঁধের উপর বাঁধাগ্রস্ত হয়। এর পরই  বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। পরবর্তীতে অমাবশ্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধটি ভাঙন বৃদ্ধি পায়। বাঁধ ভেঙে গেলে জোয়ারের পানিতে ফসলেরও ক্ষতি হওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসি।
এলাকার ইউপি মেম্বর মনির হোসেন বলেন,  যে ভাবে নদী ভেঙে নিচ্ছে বাঁধ এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে তাদের উত্তর পাশে ছয় গ্রামের মানুষ।
এছাড়াও দক্ষিন রয়েছে উলানিয়া ও গলাচিপা কলেজ, রয়েছে হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। বড় হাটবাজারও দক্ষিন পাড়ে। এই এলাকার শিক্ষার্থীরা এই সড়ক পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। এলাকার মানুষ হাটবাজারেও এই পথ ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু বাঁধ ধসে পরলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পরবে এলাকার মানুষ।
রনগোপালদি ইউপি চেয়ারম্যান  এটিএম আসাদুল হক জানায়, উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে দশমিনা উপজেলা সদরে যাতায়াতে সহজ পথ এই সড়ক । শুধু রনগোপালদি ইউনিয়নের ছয় গ্রামের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আলীপুরা ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে আউণিয়াপুর ও গলাচিপা কলেজে যাতায়াত করছে। বাঁধ ভেঙে গেলে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে। এছাড়াও দক্ষিনপাড়ের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে অন্তত তিন কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। এতে করে ভোগান্তিতে পরবে ইউনিয়নবাসি। এছাড়াও বাঁধ ভেঙে গেলে নদীর পাড়ের গ্রামগুলোতে ফসল আবাদেও বাঁধাগ্রস্ত হবে।
তিনি আরো জানান, দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে ইউনিয়নটি। ভাঙন রোধে তিনি এলজিইডি ও পাউবোকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
এলজিইডি, দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এলজিইডি থেকে সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়কের বুড়িকান্দা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার মেরামত করা হবে। বাঁধ ধসে পরায় পরের অংশ মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পাউবো বাঁধ মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণ করার পর সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয় বোর্ড, পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী  মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান দেশ সংবাদকে বলেন, বাঁধটি এলজিইডি রক্ষাবেক্ষন করছে। তারপরও যেহেতু বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, এ কারনে নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। অনুমোদন পেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে।