গ্রামীন ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তি প্রায়

গ্রামীন ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তি প্রায়

নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা, পটুয়াখালী:

”ও ধান ভানিরে, ঢেঁকিতে পার দিয়া” । ঢেঁকি নাচে আমি নাচি,হেলিয়া দুলিয়া। ধান ভানিরে।” গ্রাম্য বাংলার তরুণী-নববধূ, কৃষাণীদের কণ্ঠে এ রকম গান আর শোনা যায় না। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীদের ঘরে ধান থেকে নতুন চাল বা চাল গুঁড়া করার ধুম পড়ে যেতো। আর সে চাল দিয়ে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েশ তৈরী করা হতো। এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গে আটা তৈরীর সময় গ্রাম্যবধূরা গান গাইতে থাকেন। এখন বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র আবিস্কারের সাথে সাথে সেসব পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মত আর চোখে পড়ে না। এক সময় ঢেঁকি ছিল গ্রাম জনপদে চাল ও চালের গুঁড়া-আটা তৈরীর একমাত্র মাধ্যম। বধূরা ঢেঁকিতে কাজ করতো রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। এক সময় মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে চিড়া-আটা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। কিন্তু এখন ঢেঁকির  সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কোনো জায়গায় ঢেঁকির শব্দ আর নেই। ফলে বিলুপ্তি প্রায় গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্য কাঠের তৈরী ঢেঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানেও ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। তবুও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ বাড়ীতে ঢেঁকি রাখলেও তারা ব্যবহার করছে না। তবে আবার কেউ কেউ দরিদ্র নারীদের মজুরীর বিনিময়ে ঢেঁকিতে ধান-চাল বা আটা তৈরী করতে দেখা গেছে । যন্ত্র আবিস্কারের পূর্বে ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। তেল বা বিদ্যুৎ চালিত মেশিন দিয়ে ধান ও চাল ভাঙ্গার কারনে ঢেঁকি আজ কদরহীন । সে সময়ে কবি-সাহিত্যিকগণ ঢেঁকিকে নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। আর ঢেঁকি ছাঁটা আউশ চালের পান্তা ভাত পুষ্টিমান ও খেতে খুব স্বাদ লাগতো। বর্তমান প্রজন্ম সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত। প্রাচীনকালে ঢেঁকির ব্যবহার বেশী হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। দিন দিন ঢেঁকি শিল্প বিলুপ্ত হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।

সরজমিনে গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলোতে ঘুড়ে ঢেঁকির দেখা মেলেনি । তবে গ্রামের অনেকের মুখে শোনা গেছে আগে প্রায় সকলের বাড়িতে ঢেঁকি ছিলো এখন আর নেই । ঢেঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে এক বৃদ্ধ মহিলা জানান, আগে তাদের বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকি ছাটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। সেই পিঠার স্বাদ ও গন্ধ তার মনে পড়ে। সচেতন মহল জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। তবে ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। সে জন্য এ ঢেঁকি শিল্প রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য সকলের সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।